বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা পদ্ধতির প্রচলন, বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারি পদক্ষেপ। ২০০৯ সাল হতে দেশব্যাপী আনুষ্ঠানিকভাবে এ কেন্দ্র পরীক্ষাটি চলে আসছে। প্রাক-প্রাথমিক বা শিশু শ্রেণি হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন শেষে একজন শিক্ষার্থী যে সব জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করার কথা, তা যথাযথভাবে অর্জন করতে পেরেছে কিনা, তা যাচাই করার একমাত্র আনুষ্ঠানিক মাপাকাঠি বা পরিমাপক হলো, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। দেশের কিছু সংখ্যক শিক্ষাবিদ এ পরীক্ষা গ্রহণের বিরুদ্ধে বলছেন, সব সময়।
তাঁরা চান, এ পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করা হোক। তাঁদের যুক্তি হলো; এ পরীক্ষা আয়োজনের কারণে কোমলমতি শিশুদের ওপর আর্থিক ও মানসিকভাবে প্রচন্ড চাপ আরোপ করা হচ্ছে। তাছাড়া, শিক্ষানীতিতেও প্রাথমিক স্তরে কেন্দ্র পরীক্ষার কথা বলা হয় নি। তাই, এ পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা অসার।কিন্তু এসব বিজ্ঞজন বুঝতে পারেন না যে, বাংলার ঘরে ঘরে ড. খলিকুজ্জামান, রাশেদা কে. চৌধুরী, মন্জুর আহমদ, আবুল মোমেনের মত ব্যক্তিবর্গের জন্ম হয়, এমন পরিবেশ-পরিস্থিতি এখনও হয়নি। তাঁরা সমাজে আজকের অবস্থানে এসেছেন আবুল ফজলের মত বাংলার বিবেকের ঘরে জন্ম লাভ করেছিলেন বলে।
তৃণমূল পর্যায়ে অভিবাবকগণের শিশুদের জন্য এ পরীক্ষা কতটা উপকারি হচ্ছে, স্বচক্ষে এর কার্যক্রম না দেখলে বুঝা যাবে না। আমাদের দেশের জনগণ ও সাধারণ জনগোষ্ঠীর শিশুরা এতটা অগ্রসর হতে পারেনি যে, তাদেরকে হেসে-খেলে বড় হতে দিলেই, মানুষের মত মানুষ হবে। বিশেষত: সচেতন অভিবাবক-জনগোষ্ঠীর সন্তানদের মধ্য হতে এমন কেহ কেহ তৈরি হতে পারেন, বটে। কিন্তু, সাধারণ পরিবারের শিশুদের মধ্য হতে উল্লেখিত বিজ্ঞজনদের মত বড় মাপের মানুষ গড়ে ওঠার প্রত্যাশাটা অসম্ভব প্রায়। নিম্নে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার উপকারিতা, অপকারিতা এবং প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা হলো।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ইতিবাচক দিকসমূহ:
সীমিত সম্পদের এ বাংলাদেশে অন্যান্য খাতের ন্যায় প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায়ও অনেক সমস্যা-সীমাবদ্ধতা বিরাজমান। প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে অবকাঠামোগত সমস্যা, ভাল শিক্ষকের অভাব এবং আসবাবপত্রের স্বল্পতার সমস্যা এখনও প্রকট। প্রত্যেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোন না কোনভাবে এসব সমস্যা রয়ে গেছে। কর্মরত কর্মকর্তা, শিক্ষকমন্ডলী এবং কর্মচারিদের বেতন-ভাতা, পদ মর্যাদা, পদোন্নতি, পদায়ন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এ বিভাগে নানাভাবে তীব্র বৈষম্য এবং জটিলতা প্রভৃতি সমস্যা, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এ সকল সমস্যার মাঝেও বিগত ৫/১০ বছরে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে পরিমাণগত এবং গুণগত; উভয় দিক দিয়ে বিশাল সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহও তাদের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলোতে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সাফল্যের কথা বলছে। তাছাড়া, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্থ্য সেন; বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায নারী শিক্ষার অগ্রগতির জন্য ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বিশেষত: মানসম্মত পড়াশোনার পরিমাপক হিসেবে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা পদ্ধতি; প্রধানতম মান নির্ধারক রূপে বিবেচিত হচ্ছে। অন্তত: দুটি দিকে এ পরীক্ষার কারণে শিক্ষকদের পেশাগত ও শিক্ষার মানগত পরিবর্তন এসেছে, ব্যাপকভাবে। শিক্ষকগণ; প্রথম শ্রেণি হতে না পারলেও, প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের ৪র্থ শ্রেণি ও পঞ্চম শ্রেণির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শিখন-শেখানো কার্যক্রমে পুরোপুরি আন্তরিক ও সক্রিয় হয়েছেন। এ দু‘শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকে তাঁরা অন্তত যত্নসহকারে পড়ানো এবং পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করানোর জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতির প্রতি নজর দিচ্ছেন, তাঁরা। প্রত্যেকটি পাঠ্যবই, পাঠ্যাংশ, বিষয়বস্তু, শিখন ফল, বাক্য, শব্দ প্রভৃতি ভালভাবে আয়ত্ত্ব করানো হচ্ছে। এতে পরীক্ষার নাম করে হলেও, ভাল শিখন-শেখানো হচ্ছে। আর, অভিভাবকগণও তাঁদের সন্তানদেরেকে মানসম্মতভাবে শিক্ষা গ্রহন করানোর জন্য প্রতিযোগিতায় নেমেছেন, অনেক সচেতন হয়েছেন ও হচ্ছেন। তারা সন্তানদের ভাল বিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন, বিশেষভাবে যত্ন নেয়া ও পড়ানোর জন্য ভাল ভাল শিক্ষকের নিকট হাজির করছেন। আর তাঁরা এসব করছেন, তাঁদের সন্তানদের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করানো এবং প্রাথমিক বৃত্তি পাওয়ানোর জন্য, সর্বোপরি শিশুদের ভালভাবে গড়ে তোলার জন্য।
এ যে, শিক্ষক-অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক সচেতনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে; এটা কোন মতেই কম পাওয়া নয়। সামগ্রিকভাবে, দেশব্যাপী মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলেই সচেতন ও যত্নবান হয়েছেন ও হচ্ছেন; এর মূলে রয়েছে সমাপনী সপরীক্ষার প্রস্ততি। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করানোর এ সকল কর্মতৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটা কম পাওয়া নয, মোটেই, যা আগে কখনও লক্ষ্য করা যায়নি। গ্রামে-গঞ্জে সর্বত্র উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী-ব্যবসায়ী-স্বচ্ছল জনগোষ্ঠী তাদের সন্তানদেরকে ভালভাবে পড়াশোনা করানোর জন্য খুবই তৎপর হয়ে ওঠেছেন। টাকা-পয়সা খরচ হলেও, তারা সন্তানদের মানুষ করতে চান। আর শিক্ষকগণ নিজ নিজ দায়িত্ব-কর্তব্য পালন এবং বিদ্যালয়ে পূর্ণ সময় কাটানোর পর সকাল-সন্ধ্যা অবসর সময়ে ছাত্র/ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়িয়ে কিছু খরচের টাকা পেলে, দুর্মূল্যের এ বাজারে তাঁদেরকে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাপনের সুযোগ এনে দেয়; বৈ কি! শিক্ষকরা তো আর, অন্য কোন কাজ করার সুযোগ পান না। অনিয়ম-দুর্নীতি করে পয়সা-কড়ি কামাই করার সুযোগ-সুবিধাও তাঁদের নেই। সীমিত বেতন-ভাতায় তাঁদের সংসার চালাতে কষ্ট হয় বলে তাঁরা বাধ্য হয়ে এসব করেন। বলা হয়ে থাকে, শিক্ষকগণ শ্রেণি পাঠদান সঠিকভাবে না করে প্রাইভেট পড়ান। কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়, মুষ্টিমেয় কিছু শিক্ষক হয়ত এমনটা করেন, অধিকাংশ শিক্ষক তা করেন না।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার দুর্বলতাসমূহ: অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষার মত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায়ও কিছ কিছু বিষয় দৃষ্টিকটুভাবে দুর্বল। এসব দুর্নীতি-অনিয়ম এক সময় কেটে যাবে বলে আশা করা যায়। প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে বিদ্যমান সমস্যাগুলো যখন ন্যুনতম পর্যায়ে নেমে আসবে, তখন হয়ত এসব আর থাকবে না। পরীক্ষাটি একদা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দাঁড়িয়ে যাবে।
যাহোক, এ পরীক্ষাকে ঘিরে বর্তমানে যেসব দুর্নীতি-অনিয়ম এবং ভুল-ক্রুটি লক্ষ্য করা যায়, সেগুলো নিম্নরূপ:
. প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কোচিং ব্যবসায় চলছে ব্যাপকভাবে, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাথীদেরকে ঘিরে।
. বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত শিক্ষকগণ, শ্রেণি পাঠদানে মনোযোগি না হয়ে প্রাইভেট পড়ানোর দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।
. কোমলমতি শিশুদের ওপর পড়াশোনা ও পরীক্ষা প্রস্ততির কথা বলে অত্যধিক চাপ আরোপ করা হচ্ছে।
. অভিবাবকগণ আর্থিকভাবে মারাত্নক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
. পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে কচি শিক্ষার্থীদের উত্তর বলে দেয়ার প্রবণতা এবং অসদোপায় অবলম্বন করার প্রবণতা, তাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর হচ্ছে।
. প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বিশাল সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে।
. শিশুরা প্রাথমিক স্তর হতেই অসদোপায় অবলম্বন করে সনদ লাভের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে।
. পরীক্ষা প্রস্তুতির চাপে পড়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শিখছে ও পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করছে, যা পরবতী শিক্ষা স্তর ও কর্মজীবনে তাদেরে কোোন উপকারে আসবে না।
. শিশুরা সৃজনশীল হয়ে ওঠতে এবং স্বকীয়তা নিয়ে বড় হওয়ার সুযোগ হতে বঞ্চিত হচ্ছে।
. পরীক্ষা প্রস্ততির নাম করে শিক্ষার্থীরা গাইড বই/নোট বই পড়ছে বেশি বেশি, মূল বই ও বিষয়বস্তু পড়ে মৌলিক জ্ঞান অর্জন, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করতে পারছে না।
. শিক্ষানীতিতে/২০১০ প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণের কথা না থাকলেও, এ পরীক্ষা আয়োজন করে এ স্তরের শিশুদের ওপর নির্যাতন ও অবিচার করা হচ্ছে।
এভাবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। আর একটা পক্ষ এ পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে। এসব সমালোচনায় সত্রতা আছে, কিন্তু পুরো সত্য নয়।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ:
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বর্তমানে সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা। আর প্রত্যেক পাবলিক পরীক্ষায়ই কিছুটা দুর্বলতা ও ভুলক্রুটি রয়ে গেছে। দেশের খ্যাতনামা একদল শিক্ষাবিদের পরামর্শেই পি.ই.সি.ই(পি.এস.সি)/এবতেদাযী এবং জেএসসি/জেডিসি পরীক্ষা দুটি চালু করা হয়েছে। এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়ে আসছে, শত বর্ষ ধরে। এখনও এদুটি পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে অনেক সমালোচনা করা হয়। আবার পি.এস.সি এবং জে.এস.সি পরীক্ষা চালু করা হয়েছে, ৬/৭ বছর হয়েছে, মাত্র। এ পরীক্ষা দু‘টিতে কিছুটা দুর্বলতা বা ভুলক্রুটি থাকবে, এটা অস্বাভাবিক নয়। বর্তমান পদ্ধতিতে পরীক্ষা দু‘টি অব্যাহত থাকলে, এক সময় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে, তা। তখন হয়ত, এর সমালোচনার ধার এত তীব্র থাকবে না।
বিশেষত: প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে যেসব সমস্যা এখন পরিলক্ষিত হচ্ছে, একটা পর্যায়ে এসব থাকবে না বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। বিশেষত: এ পরীক্ষা চালু হওয়ার ফলে পঞ্চম শ্রেণির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পাঁচ (০৫ বছর) বছরের অর্জিত যোগ্যতা যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে। আগে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ২০ শতাংশ মাত্র বৃত্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ পেত। অন্যান্য শিক্ষাথীদের মান আনুষ্ঠানিকভাবে যাচাইয়ের তেমন সুযোগ ছিল না। তাছাড়া, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর গ্রেড বা মান যাচাই করার সুযোগও তেমনটা ছিল না। বর্তমানে বিদ্যালয়গুলোর মান যাচাইয়ের একটা বড় সুযোগ করে দিয়েছে, এ প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা।
আমাদের দেশে বর্তমানে যাঁরা বরেণ্য ব্যক্তিত্ব এবং বুদ্ধিজীবী-শিক্ষাবিদ বলে পরিগণিত হন, তাঁদের অধিকাংশই আজকের অবস্থানে এঁসেছেন; একটি বিশেষ সুবিধাভোগি এবং স্বচ্ছল পরিবার হতে। সাধারণ পরিবার হতে ওঠে এসেছেন, এমন সফল মানুষের সংখ্যা খুবই কম। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকার কতৃক গৃহীত বিশাল কর্মযজ্ঞের অংশ হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ব্যবস্থার সুফল সুদূর প্রসারী এবং ব্যাপক, এতে সন্দেহ নেই। সাধারণ পরিবারের সন্তানদের মানুষ করার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী বর্তমানে এ পরীক্ষা পদ্ধতির তীব্র সমালোচনা করছেন। অথচ তিনিই এ পরীক্ষা চালু করার সময়ে এর পক্ষে অনেক যুক্তি প্রদর্শন করেছিলেন। তখন তিনি, আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন যে, এ পরীক্ষা এক সময় অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষার মত প্রাতিষ্ঠানিক পরিণতি পাবে এবং ভুল-ক্রুটি কেটে যাবে। তাঁর সে আশাবাদই এখনও প্রযোজ্য। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার অপরিহার্যতা উপলব্ধি করবেন সবাই, এটাই প্রত্যাশিত।
উপসংহার: প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল নয়; চাই এ পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার। বর্তমানে যে সব সমস্যা ও ভুল-ক্রুটি পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা ধীরে ধীরে অপসারণ করে এবং সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে এ পরীক্ষা আয়োজনের ওপর জোর দিতে হবে। কী কী করলে, পরীক্ষাটি আরও ভালভাবে সফলভাবে পরিচালনা করা যাবে সে পরামর্শ দিন সবাই, বাতিল করার কথা ভাববেন না, দয়া করে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনুস একবার উপজেলা ব্যবস্থা বাতিল করার পর বলেছিলেন, আমরা প্রতিষ্ঠান ভাংতে জানি, গড়তে জানি না। এখন সকলেই উপজেলা পদ্ধতিকে মেনে নিয়েছেন। এ কথাটি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।আমি মনে করি, সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করা নয়, এটাকে আরও সুষ্ঠ এবং সুন্দর করে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়াই উত্তম হবে।
উপজেলা ব্যবস্থার মত এ পরীক্ষা পদ্ধতিও সবাই এক সময় পছন্দ করবেন বলে আমার ধারণা। বিগত ১৬ বছর ধরে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে কাজ করছি। সার্বিক বিবেচনায় এ পরীক্ষা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে সহায়ক হচ্ছে, বিরূপ ভুমিকা পালন করছে না মোটেই।
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
কুতুবদিয়া, কক্সবাজার।