কক্সবাজারের চকরিয়ায় সামাজিক বনায়নের বৃক্ষ নিধন করে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তা লুট করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে একটি প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্রের বিরুদ্ধে। দিবারাত্রি ২০/২৫টি ড্রেজার মেশিন প্রভাবশালী ওই ভূমিদস্য চক্রটি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এসব বালু উত্তোলনের পর নির্দিষ্ট স্থানে মওজুত করে তা ডাম্পার গাড়ি দিয়ে বিভিন্ন স্থানে তা পাচার করে দিলেও সংশ্লিষ্ট বন বিভাগ রহস্যজনকভাবে নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করে চলেছেন। ফলে বালুদস্যদের কবলে পড়ে একদিকে যেমন পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটছে তেমনি সরকারও লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পক্ষে ক্ষতিগ্রস্থ এক উপকারভোগী ও স্থাণীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন বাদী হয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফূলছড়ি রেঞ্জের অধিন খুটাখালী বনবিটের সংরক্ষিত বন্ঞ্চলের পাগলির বিল হারগাজা ছড়ার (খাল) মাথা নামক এলাকায় চলছে এ বালু লুটের মহোৎসব। অভিযোগ উঠেছে, বালু লুটের স্থানটি খুটাখালী বনবিট ও ডুলাহাজারা সাফারী পার্কের অংশে পড়ায় সংশ্লিষ্ট দু’পক্ষই বালুদস্যুদের কাছ থেকে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রকাশ্যে এ বালু লুটের সুযোগ করে দিলেও এর দায় নিচ্ছেননা কেউ।
সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী ও ক্ষতিগ্রস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন বিভিন্ন দপ্তরে তার দায়ের করা অভিযোগে দাবী করেন, গত ২০১১-১২ সনে ডুলাহাজার ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের নামে খুটাখালী মৌজার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৫০ একর জায়গা বরাদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছ রোপন করে বাগান সৃজন করেন তারা। কিন্তু একই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বালুরচর এলাকার মৃত বাহার উল্লাহ’র ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম পুতু (৩৫), একই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন পাড়া এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেরে আয়াত উল্লাহ (৩৭), একই এলাকার আবুল খায়েরের ছেলে বেলাল উদ্দিন ড্রাইভার (৪০) ও হেলাল উদ্দিন (৩২) ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব নতুন পাড়া এলাকার মৃত আবুল হোসাইনের ছেলে আমিন উদ্দিন (৪০) এবং আরো অন্যান্য লোকজন দূর্লোভের বশীভ’ত হয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় উপকারভোগীদের বাগান জবর দখল করে বাগানের সম্পূর্ণ বৃক্ষ নিধন করে উজাড় করে ফেলে। পরবর্তীতে ওই চক্রটি বাগান ভুমিতে বালি কাটার ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের পর তা নির্দিষ্ট স্থানে স্থুপ করে একের পর ডাম্পার গাড়ি দিয়ে লুট করে নিয়ে যায়। বর্তমানেও ওইসব ব্যক্তিরা সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের বাগান নিধন করে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু লুট করে যাচ্ছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন তার লিখিত অভিযোগে আরো দাবী করেন, এসব বালু লুটকারীদের এ অনৈতিক কাজের ব্যাপারে আমারা উপকারভোগীরা বাঁধা দিলে তারা আমিসহ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অন্যান্যদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে প্রাণ নাশের হুমকী দিয়ে ধাওয়া করে। এ সময় প্রভাবশালী বালুদস্যুরা তাদের এ অনৈতিক কাজে আবারো কেউ বাঁধা দিলে তাকে গুলি করে হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলার হুমকি প্রদান করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছি। ফলে এ ভুমিদস্যুদের কবল থেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমি উদ্ধার করে তা তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে এ লিখিত আবেদন করেন বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্থ উপকারভোগী দাবী করেন, প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের বালু লুটের স্থানটি খুটাখালী বনবিট ও ডুলাহাজারা সাফারী পার্কের অংশে পড়ায় সাফারী পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম ও খুটাখালী বিট কর্মকর্তা রেজাউল করিম বালুদস্যুদের কাছ থেকে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রকাশ্যে এ বালু লুটের সুযোগ করে দিয়েছেন।
তবে খুটাখালী বিট কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সামাজিক বনায়নে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে ডিএফও স্যারের নির্দেশে সেখানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানকালে ঘটনাস্থলে বালুর বিশালাকার একটি স্থুপ পাওয়া গেলেও কোন ড্রেজার মেশিন ও বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। বালু উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি সঠিক নয় বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে সাফারী পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, বালু উত্তোলনের স্থানটি সাফারী পার্কের নিয়ন্ত্রনাধীন নয়। সুতরাং বালু উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টিও সঠিক নয় বলে দাবী করেন তিনি। ####