লাখো মুসল্লির অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম, হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী হুজুরের জানাযা সম্পন্ন হয়েছে হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে। তীব্র গরম উপেক্ষা করে আজ দুপুর দুইটায় অনুষ্ঠিত জানাজায় লাখো মুসল্লির ঢল নামে। আল্লামা শাহ আহমদ শফী হুজুরের বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফের ইমামতিতে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে জানাযার পূর্বে বক্তব্য রাখেন হাটহাজারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও আল্লামা শফী হুজুরের বড় ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ।
উপস্থিত লাখো মুসল্লির উদ্দেশ্যে আল্লামা শফীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বলেন ” মাত্র ১০ বছর বয়সে আমার পিতা হাটহাজারী মাদ্রাসায় এসেছিলেন দ্বীনি শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে, সেই থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসা এবং চট্টগ্রামের মানুষের সাথে আমার পিতার আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমার পিতার জানাযায় সারা বাংলাদেশ থেকে যেসব মুসুল্লি এসেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং আমার পিতা জীবদ্দশায় যদি কোন ভুল ত্রুটি করে থাকেন আপনার ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ” জানাযার সময় নির্ধারিত হওয়ার পর গতকাল রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা হাটহাজারী মাদ্রাসায় আসতে থাকে। ভোরের মধ্যেই মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এবং এর আশেপাশের বিশাল এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। জনতার ঢল মাদ্রাসা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গেট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
জানাযায় আগত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোঃ রাশেদুল ইসলাম বলেন ” দেশ বরেণ্য আলেম আল্লামা শফী হুজুরের ইন্তেকালে আমি শোকাভিভূত ও মর্মাহত। ইসলামের প্রচার-প্রসার এবং নাস্তিকতা বিরোধী আন্দোলনে আল্লামা শাহ আহমদ শফী হুজুর সাহেব যে ভূমিকা রেখেছেন তা বাংলাদেশের মুসলিম উম্মাহ আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ রাখবে “ চট্টগ্রাম শহর থেকে আগত ব্যবসায়ী ইরফান সিদ্দিকী বলেন ” গতকাল সন্ধ্যায় হুজুরের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই চোখের পানি ফেলেছি। আল্লামা শফী হুজুর সাহেব যে ইসলামের কত বড় খেদমতকারক ছিলেন তা বাংলাদেশের মানুষ বুঝবে সময়ের বিবর্তনে।
“সুদূর সিলেট থেকে আগত ষাটোর্ধ্ব বয়সী একরামুল করিম বলেন ” আমি হুজুরের ছাত্র ছিলাম। হুজুরের মৃত্যু সংবাদ শুনে ছুটে এসেছি হুজুরকে একনজরে দেখার জন্য “। উল্লেখ্য, হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী গতকাল সন্ধ্যা ৬.২০ মিনিটে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
২০১৩ সালে নাস্তিকতা বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ সহ সমগ্র বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফী। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মুসলিম উম্মাহর মাঝে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বিশেষ করে কওমি শিক্ষা সনদ আদায় ও কওমি শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন এবং নাস্তিকতা বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে সাধারণ জনগণের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় আল্লামা শাহ আহমদ শফী ।
আল্লামা শফী হুজুরের জানাজায় লাখো মুসল্লির উপস্থিতি এই জনপ্রিয়তার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন সকলেই।