কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহরে বেশ কিছুদিন ধরে কিশোরগ্যাং এর তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘গ্যাং কালচারের’ নামে কিশোরদের একটি অংশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। তারা পাড়া মহল্লায় প্রতিদিন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। দলবেঁধে লাঠিসোঠা, অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন অলি গলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাইক তাদের ‘ফ্যাশন’। তুচ্ছ ঘটনায় মারামারি ও ঝগড়া ফ্যাসাদে জড়িয়ে পড়ছে এসব কিশোর। এতে করে খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে। ‘ভার্চুয়াল’ জগতে ‘সিক্রেট গ্রুপ’ তৈরি করে এরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করছে। সেখানে ভয়ঙ্কর ‘সিক্রেট মিশনের’ খুঁটিনাটি বিষয়ের পরিকল্পনা করছে। এসব কিশোর গ্যাংয়ের রয়েছে বাহারি সব নাম। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কিশোর অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
বর্তমানে চকরিয়া পৌরশহরের পাড়া মহল্লায় আবার কিশোর আড্ডা জমছে। সক্রিয় হচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এলাকার উঠতি কিশোর গ্যাং গ্রুপ এখনো অনেকটাই অধরা। অভিভাবকসহ পরিবারের ছোট বড় সকলেই বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
কয়েক দিন ধরে চকরিয়া পৌরশহরের বালিকা বিদ্যালয় সড়ক, হাসপাতাল সড়ক, ওয়াপদা সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে কিশোরগ্যাংদের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাদের হাতে ছিল ভারী অস্ত্র শস্ত্র।
কিশোর গ্যাং প্রসঙ্গে চকরিয়া পৌর সচিব মাসউদ মুর্শেদ বলেন, কিশোরদের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ গঠনে যে শিক্ষার দরকার পারিবারিক ভাঙ্গনসহ বিভিন্ন কারণে সেটা তারা পরিবার থেকে পাচ্ছে না। তিনি বলেন, সনাতন সমাজ থেকে শিল্প সমাজে প্রবেশ করার সাথে সাথে সামাজিক যে পরিবর্তন হয়েছে তা মোকাবেলায় আমাদের সে ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। ফলে যারা একেবারেই নিম্নবিত্ত তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে লালিত পালিত হওয়ার পরিবর্তে বাইরে বা বস্তিতে বেড়ে উঠছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে শিশু পরিচর্যাকেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। নৈতিকতার শিক্ষা যেহেতু শিশুরা পরিবার থেকে পেতে ব্যর্থ হচ্ছে তাই স্কুলের পাঠ্য বইয়ে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
চকরিয়া পৌরর মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে চকরিয়া পৌরশহরে কিশোরগ্যাং এর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। এদের মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরকেও দেখা যাচ্ছে। অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের সংশোধনাগারে রাখার বিষয়গুলো এখন অনেক দেশে নাই। তাই সমাজ পরিবর্তনের সাথে কি চাহিদা সেটা চিহ্নিত করে সে ধরণের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরো বলেন, জরুরি ভিত্তিতে প্রশাসনের সাথে কথা বলে এবিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
চকরিয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, কিশোরগ্যাং এর সদস্যরা কথায় কথায় মারামারিতে জড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি ভাড়াটে হিসাবেও ব্যবহার হচ্ছে। এদের বেশিরভাগই কিশোর। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথেও জড়িত। প্রভাবশালীরা তাদের ফায়দা হাসিলের জন্য এদেরকে ব্যবহার করে থাকে।
বর্তমানে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে কিশোর গ্যাংয়ের ডালপালা। এরা তাদের মাদকের টাকা জুটিয়ে নেয়া বান্ধবীর খরচ নিজেকে ষ্মার্ট দেখাতে পোষাক পরিচ্ছদের খরচ মেটাতে চুরি ছিনতাই অপহরনের কাজে লিপ্ত করেছে। এসব কিশোর তরুণরা ব্যবহৃত হচ্ছে মাদক আনা নেয়ার কাজে। এক সময় তারাও মাদকাশক্ত হয়ে পড়ছে। এসব কিশোর তরুন কখনো পুলিশ র্যাবের হাতে ধরা পড়লেও কিছুদিন পর জামিনে বেরিয়ে এসে আবার পুরানো পথে হাটছে দ্বিগুন উৎসাহে। থানা পুলিশের খাতায় ছিনতাইকারীর তালিকায় রয়েছে বহু কিশোরের নাম।
সুশীল সমাজ মনে করছেন শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবেনা এদের বিরুদ্ধে সামাজিক ভাবে প্রতিরোধ গড়ার পাশপাশি প্রত্যেক পরিবারকে সচেতন হতে হবে। তাদের সন্তানরা কোথায় যায় কার সাথে মেসে তার খোজ খবর রাখতে হবে। আর কিশোরদের হাতে স্মার্টফোন দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারন এই স্মার্টফোন কালচার সর্বনাশ ঘটাচ্ছে। ভেঙ্গে পড়ছে মানবিক মূল্যবোধ সমাজের রীতিনীতি।
চকরিয়া পুলিশ কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ বিষয়টি ওয়াকিবহাল বলে জানিয়ে সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে বলেও দাবি করেছেন। যেকোনো সময় অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও জানান।
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শাকের মোহাম্মদ যোবায়ের বলেন, চকরিয়া থানার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অফিসার ফোর্সদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে বিট পুলিশিং বিষয় কিশোর গ্যাং বিষয় শীতকালীন সময়ে ডিউটি করার বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ এবং মানুষের সাথে সুন্দর ব্যবহার একইসাথে আইন প্রয়োগের বিষয়ে কঠোর হওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।