• শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন
Headline
শহীদ জিয়া স্মৃতি বৃত্তির ফলাফলে পাঁচ উপজেলায় শীর্ষে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ! প্রাকৃতিক অধিকারই মানবাধিকার, যা সার্বজনীন সালাহউদ্দিন আহমেদের নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু কোটচাঁদপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মীদের কর্মবিরতি কোটচাঁদপুরে ট্রাকচাপায় পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যু চকরিয়ার সাহারবিলে দাঁড়িপাল্লা মার্কার সমর্থনে গণসংযোগ ও পথসভা ব্রাইট ফিউচার স্কলারশিপ পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নাম্বার ও বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ! লামায় ট্রাক্টর ও মোটর সাইকেল সংঘর্ষে নিহত – ১, আহত ৪ চৌগাছা-যশোর সড়কে আবারো রক্ত; মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত ৭ চকরিয়ায় পুলিশ অভিযানে আসায় বৃদ্ধ দম্পতিকে পিটিয়ে আহত করেছে সন্ত্রাসীরা

প্রাকৃতিক অধিকারই মানবাধিকার, যা সার্বজনীন

বিবিসি একাত্তর ডেস্ক / ১১৭ Time View
Update : মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

বদরুল ইসলাম বাদল
———————
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস।১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর দিনটিকে জাতিসংঘ  মানবজাতির মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের স্বীকৃতি হিসেবে দিবসটির ঘোষণা দিয়েছিলো। ধর্ম বর্ণ,নারী পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে সকলেই শুধুমাত্র মানুষ হিসেবে জন্মের কারণেই কিছু সহজাত অধিকারের অধিকারী হয়। যেমন  জীবন, স্বাধীনতা এবং সম্পত্তির অধিকার। যে অধিকার গুলো সার্বজনীন এবং অবিচ্ছেদ্য। জন্মের অধিকারে প্রাপ্য এই অধিকার গুলোর উপর যদি  কোন ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্টান কতৃক  হস্তক্ষেপের সম্মুখীন  হয় তখনই  মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে  হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
এই অধিকার গুলো সংরক্ষণের তাগিদে এই দিনে জাতিসংঘের “মানবাধিকার ঘোষণা” বিশ্বমানবতার জন্য সুবিস্তৃত পথ নির্দেশিকা।সেহেতু বলা চলে,  মানবাধিকার একটি আন্দোলনের নাম।যা মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সনদ। এই লক্ষ্য নিয়ে দেশেবিদেশে অনেক সংগঠন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা সহকারে  কাজ করছে। দেখা যায় নামসর্বস্ব অনেক ভূঁইফোড়  সংঘটনও মানবাধিকারের তকমা লাগিয়ে  নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে,শালিশ বিচারের নামে টাকা ইনকামের সহজ পথ হিসেবে নিয়েছে।মানব সেবার নামে এই অশুভ  চক্রটি সক্রিয় রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। বিশ্বের মানুষ আজ গভীর সংকটও বিভ্রান্তির আবর্তে বন্দী।
কতিপয় মানুষের  অতিলোভ, হিংসা এবং বিদ্বেষের কারণেই   “প্রাকৃতিক অধিকার”
” ভোগের ব্যাঘাত ঘটায় ।
যা  যথাযথই মানবাধিকারের  লঙ্ঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।  ১০ই ডিসেম্বর সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহ  বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটি পালন করে থাকে । জনগণের
মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে চেষ্টা করে।হিউম্যান এইড ইন্টারন্যাশনাল  কক্সবাজার জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক  কামরুন তানিয়া  বলেন, “”মানবাধিকার শুধু উদযাপনের দিন নয়।একটি মানবিক মর্যাদা পূর্ণ সমাজ গঠনের অঙ্গীকারের দিন”।সমাজবিজ্ঞানীদের মতে শুধু আইন সনদ ও ক্রেস্ট দিয়ে মানবাধিকারের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।দরকার সুন্দর মানসিকতার এবং নিঃস্বার্থ ভাবে  সেবা দেওয়ার মনোভাব।পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে “প্রাকৃতিক অধিকার” নিয়ে মানবতার জয় আসুক।১০ ডিসেম্বরে এটাই শপথ হোক।বিশ্ব আজ অস্থিরতায় আকন্ঠ নিমজ্জিত।যুদ্ধ, হাঙ্গামা।মারো কাটো ধর,সাবাড় করো।কোথাও  সম্পদের লিপ্সায়,কোথাও ভূমি,কোথাও জাত-পাত বা ধর্মীয় কিংবা রাজনীতির বিভাজনে। পৃথিবীতে বেশিরভাগ মানুষ দারিদ্র সীমানার নিচে।অভুক্ত, খোলা আকাশের তলে  বসবাস করছে।সেদিকে বেখেয়াল আধুনিক বিশ্ব।খাদ্য উৎপাদনের চেয়ে মারণাস্ত্র তৈরির প্রতিযোগীতা নিয়ে ব্যস্ত উন্নত দেশগুলো। মানুষকে বাচাঁনোর চেয়ে মেরে ফেলবার কৌশল নির্ণয়ে অনুসন্ধান চলছে।পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমে জানা যায় যে,আফ্রিকায় খাদ্যের জন্য ছুটে চলা  অভুক্ত এক শিশু নিথর হয়ে  মৃত্যুর ক্ষণ গুনছে, আর শিশুটিরপিছনে দাঁড়িয়ে একটি মাংসখেকো  শকুন শিশুটির মৃত্যুর অপেক্ষা করছে।দুর্ভিক্ষ মানব সমাজকে
কি রকম ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নিয়ে যায় ছবিটি তার বাস্তব সাক্ষী এবং অস্থির রাজনীতির পরিণতি।
বর্তমান সময়ে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়, সুদানে,সোমালিয়ায়, ইয়েমেন সহ অনেক দেশেই ঐরকম  মানবতার বিভৎস চিত্র অহরহ চোখে পড়ে।
ভৌতিক প্রতিযোগিতায় বিশ্বের মোড়লপনায় আসীন রাজনৈতিক অধিপতিরা।অসুস্থ বেয়াড়া রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে জিম্মি তৃতীয়  বিশ্বের মানুষ।রাজনীতি বিজ্ঞানের সংজ্ঞায় যদি,”অর্থনীতির ঘনীভূত রুপের নাম রাজনীতি হয়” তখন কথা ছিল যে,” কম খরচে কম সময়ে অধিক উৎপাদনের ফর্মুলা নির্ণয়ের”।কিন্তু হচ্ছে তার উল্টোটা।অধিক মানুষ একসাথে কিভাবে  মারা যায় তার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত বিশ্বের শক্তিধর সম্প্রদায়।খাবারের বাহানায় জড়ো করে  ক্ষুধার্ত মানুষদের হত্যা করা হচ্ছে।নারী শিশু এবং নিরস্ত্র মানুষকে বিনাবিচারে হত্যা করা হচ্ছে।যা অহরহ চোখে পড়ে প্রতিদিন।  বিশ্ব বিবেক কোথায় আজ?জ্বলছে ফিলিস্তিন ,সুদান ,ইরান ইরাক সিরিয়া ইয়েমেন সহ অনেক  দেশ।মানবতার ধারক বাহক  জাতিসংঘ এগুলো দেখেও দেখে না।নিরাপত্তা পরিষদে “ভেটো”পাওয়ার  বাস্তব সম্মত প্রস্তাবও পাশ হয় না।ভেটো ক্ষমতাই মানব জাতির অধিকার সংরক্ষণের বড় বাঁধা ও প্রতিবন্ধকতা হয়ে আছে। মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নে গলার কাঁটা হয়ে আছে নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে পাওয়ার।চারিদিকে হানাহানি যুদ্ধ-বিগ্রহ দারিদ্র্য দুর্দশা অসাম্যের পৃথিবী মানুষের কান্নায় ভারি হয়ে আছে । কবির ভাষায়,
“আজ মন থেকে আসে শুধু ধিক্কার
খুঁজে না পেয়ে মানবাধিকার
সভ্যতা আজ ধর্ষিত হয়ে
করে শুধু চিৎকার”।
মানবাধিকার ছাড়া কোন মানুষ পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না।মানবিক মানবতা অনেক সময় গলার ফাঁস হয়ে উঠে।যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ আমাদের কক্সবাজার। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের জায়গা দেয়া হয়েছিল, কিন্তু তার পরিনাম হাড়েহাড়ে বুঝতে পারছে এই অঞ্চলের মানুষ।রোহিঙ্গাদের জায়গা দিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে  অনেক বাহবা পেয়েছি আমরা ।বার লক্ষ রোহিঙ্গাদের জায়গা করে দিয়ে তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করা চাট্টিখানি কথা নয়।শরনার্থী  রোহিঙ্গারা এই অঞ্চলের  জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। নিজের দেশ থেকে বিতাড়িত এই জনগোষ্ঠী হতাশার কারণে বিভিন্ন রকম অপরাধে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে।  তাঁরা  মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। চিনতাই চুরি সহ এমন কোন অপরাধ নাই তারা করছে না।।রোহিঙ্গাদের বর্জ্যের কারণে উখিয়া টেকনাফের বিশাল ফসলী জমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ে  আছে।বাংলাদেশ আর এদের ভার সইতে পারছেনা। আমরা তাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছি।জাতিসংঘ সহ শরনার্থীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার কাছে বিশ্ব “মানবাধিকার দিবস” এ আবেদন, রোহিঙ্গাদের তাদের   মাতৃভূমিতে পূনর্বাসনের  মাধ্যমে  মানবাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হউক।আমরা আর বাহবা চাই না,আশ্বাস নয়।কার্যকরী ভূমিকা চাই সংশ্লিষ্ট মহলের। অভিজ্ঞমহলের অভিমত, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন বিলম্বিত হওয়ার পিছনে   মানবাধিকারের নামে দেশি-বিদেশি সক্রিয় “শরনার্থী বাণিজ্য” নিয়ে কাজ করা এজেন্টদের দায়ী করছে।  যার যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে  তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশ সমূহ। উদাহরণ আমাদের কক্সবাজার। রোহিঙ্গারা ধীরে ধীরে আমাদের শ্রম বাজার দখল করে নিচ্ছে।ফলে কাজ হারাচ্ছে আমাদের দেশের শ্রমজীবী মানুষ। কক্সবাজার শহরের যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর  অদক্ষ গাড়িচালকদের দায়ি করছে সচেতন মহল। অপেশাদার এসব চালকের বেপরোয়া ব্যবহার পর্যটন নগরীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাই তাদের গাড়ি চালানো বন্ধ করা দরকার মনে করে, যানজট নিয়ে চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ। তাদের মতে মানবতার মহানুভবতা দেখাতে গিয়ে এদের  কারণে বিশেষ করে এই জনপদের জনগোষ্ঠীর মানবাধিকারে উপর চরম ব্যাঘাত হচ্ছে। তাই তাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন চায় উদার রক্ষণশীল সমাজের বাসিন্দা কক্সবাজারবাসী।বর্তমান সময়ে  পৃথিবীর কোথাও সঠিক মানবাধিকার প্রতিষ্টিত নয়।এসবের মূল কারণ মানুষ তার নিজের  অধিকার নিয়ে অবগত নয়।,মৌলিক অধিকার কিংবা প্রাকৃতিক অধিকার নিয়ে সচেতন নয়। তাই মানবাধিকার সংগঠন  সমূহের  প্রধান দায়িত্ব  জনগণকে নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেতন করা সবার আগে জরুরি।আলোচিত  মানবাধিকার নেত্রী সহেলী পারভীন এর মতে, “অধিকার বঞ্চিত তৃণমূল গণমানুষকে মানবাধিকার বিষয়ে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে এবং সাথে সাথে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে”।বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে  মানবাধিকার সুরক্ষিত থাকুন।মানবতার জয় অনিবার্য।
———–
বদরুল ইসলাম বাদল
কলামিস্ট ও সমাজকর্মী।


আপনার মতামত লিখুন :
More News Of This Category

ফেসবুকে আমরা